উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭/০৭/২০২৫ ৮:২২ এএম
ইসলাম মানুষকে আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে গণ্য করে। কাউকে প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করে গালি দেওয়া শুধু অসভ্যতা নয়, বরং এটি ইসলামি শরিয়তে নিষিদ্ধ ও গর্হিত কাজ। কোরআন-হাদিসে মানুষের সম্মান রক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং অপমানকর আচরণকে কঠোরভাবে নিন্দা করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি।’ (সুরা ইসরা: ৭০) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানবজাতিকে সম্মানিত করেছি…তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি আমার সৃষ্টিজগতের অনেকের ওপর।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৭০)

গালিগালাজ ও অপমানকে হারাম ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘তোমরা একে অপরকে উপহাস করো না। (সুরা হুজুরাত: ১১) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মুমিন গালিগালাজকারী, অভিশাপদাতা ও অশ্লীলভাষী হয় না।’ (তিরমিজি ১৯৭৭)

এসব দলিল থেকে স্পষ্ট যে, ইসলামে কারো সম্মানহানি করার অনুমতি নেই এবং তা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

 

প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করে গালি: ইসলামি বিধান

নবীজি (স.) সরাসরি মানুষকে প্রাণীর সাথে তুলনা করে গালি দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- لَا يَقُولَنَّ أَحَدُكُمْ لِلرَّجُلِ: يَا كَلْبُ، يَا حِمَارُ ‘তোমাদের কেউ যেন কোনো মানুষকে হে কুকুর! হে গাধা! না বলে। (মুসনাদে আহমদ: ৩৮৪২; সহি লিসানুল মিজান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১০২)

সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব (রহ.) ও ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) বলেন, তুমি তোমার সঙ্গীকে বলো না, ওহে গাধা, এই কুকুর, হে শূকর! তাহলে কেয়ামতে আল্লাহ তোমাকে বলবে, তুমি কি আমাকে দেখেছ যে আমি তাকে কুকুর বানিয়েছি, গাধা বানিয়েছি কিংবা শূকর বানিয়েছি! (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ২৮২-২৮৩/৫ )

প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করে এসব কথা নিছক গালি নয়, বরং এটি মানুষকে পশুর মর্যাদায় নামিয়ে আনার চেষ্টা, যা ইসলামের দৃষ্টিতে গর্হিত ও অন্যায়। এসব গালি মর্যাদাহানিকর, অপমানজনক এবং সমাজে ঘৃণা ও বিবাদ সৃষ্টি করে। ইসলাম প্রত্যেক মানুষের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার শিক্ষা দেয়, চরম শত্রুকেও গালি না দিয়ে উত্তম ভাষায় জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

 

ব্যতিক্রম: পবিত্র কোরআনে কাফেরদের আচরণকে উদাহরণ হিসেবে প্রাণীর সাথে তুলনা করা হয়েছে। যেমন ‘তারা গাধার মতো’(সুরা জুমুআ: ৫), কিন্তু এটি ব্যক্তিগত গালি হিসেবে নয়, বরং তাদের আচরণ বর্ণনার জন্য।

দুনিয়া ও আখেরাতের পরিণতি

ক. দুনিয়াবি ক্ষতি: ব্যক্তির আত্মসম্মান নষ্ট হয়। সামাজিক সম্পর্কে ফাটল ধরে। গালিদাতার সম্মান কমে যায়।
খ. আখেরাতের শাস্তি: কেয়ামতের দিন সম্মানহানির বিচার হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তার নেকি কেটে নিতে পারবে। ক্ষমা না চাইলে এবং তাওবা না করলে শাস্তি অবধারিত।

প্রতিকার ও করণীয়

  • আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।
  • ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
  • গুনাহ মোচনের জন্য দান-সদকা করা।
  • রাগ নিয়ন্ত্রণে ‘আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ পড়া।
  • উত্তেজনায় চুপ থাকা উত্তম।

 

ইসলামি স্কলারদের মতামত

ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘মানুষকে প্রাণীর সাথে তুলনা করা হারাম, কারণ তা মর্যাদাহানি করে।’ (আল-আজকার: ২য় খণ্ড, পৃ: ১৮৫)
ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘প্রাণীর নামে গালি দেওয়া নিষিদ্ধ, বিশেষ করে মুসলিম ভাইয়ের জন্য।’ (ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া, ৩য় খণ্ড, পৃ: ৪৫৬)

জবানের শুদ্ধতা অপরিহার্য

ইসলামে মানুষের সম্মান রক্ষা করা জরুরি। প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করে গালি দেওয়া শুধু অশালীনই নয়, বরং তা কবিরা গুনাহ। নবীজি (স.) বলেছেন- ‘মুমিন সে-ই, যার জবান ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি: ১১, মুসলিম: ১৭২) রাসুল (স.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।’ (বুখারি: ৬০১৮; মুসলিম: ১৮২)

অতএব, আমাদের উচিত— জবানকে হারাম কথা থেকে বাঁচানো, সম্মানজনক আচরণ করা, তাওবা ও সংশোধনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে উত্তম আচরণের তাওফিক দান করুন। আমিন

পাঠকের মতামত

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাদ-বিচ্ছেদ লাগানো নিয়ে যা বলেছেন মহানবী (সা.)

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মান-অভিমান, মনোমালিন্য স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে বর্তমানে অনেকে ব্যক্তিগত স্বার্থ, নিজের পছন্দ-অপছন্দ ও ব্যক্তি ...